মার্জিয়া বেগম
পরচর্চা হচ্ছে একধরণের বিনোদন বা অ্যামিউজমেন্ট।সব বিনোদনে সরকারকে কর দিতে হয়।কিন্তু পরচর্চায় কোন ধরনের কর দিতে হয় না।যতো খুশি করা যায়।বিনোদন নেওয়া যায়।
–
পরচর্চায়, স্বপ্নে পোলাও রাঁধতে গিয়ে ঘি ঢালতেও কার্পণ্য করে না অনেকে!পরচর্চা যখন শুরু হয় তখন তিলকে তাল,নারকেলকে সর্ষে, নর’কে বানর বানাতেও দ্বিধাবোধ করে না অনেকে।প্রবাদে আছে’রাজা উজির মারা’।অনেকেই রাজা হয়ে উজির মারেন।এমনিতে রাজা হয়ে উজির মারা এতো সহজ না।কিন্তু খুব সহজেই তাদের মারা যায়,শুধু পরচর্চার বধ্যভূমিতে।বসে গেলাম সেই জায়গায়,বাস্তবে যাদের নাগাল পাবো না।সামনে আসলে যাদের’ টু ‘শব্দটিও করতে পারবো না।শুরু করলাম, তাদের বিরুদ্ধে পরচর্চা মানে নিন্দা।এরপর ওদের মেরে কেটে,ল্যাঙ মেরে ধরাশায়ী করে,কুপোকাত করে,নরাধম বানিয়ে দিলাম।
আহা!কি সুখ!কি সুখ!
—
এমনিতে যদি লাঠি,চাকু,বন্দুক নিয়ে মারতে যাই,তবে কিন্তু নিজেও আহত বা নিহত হওয়ার সম্ভবনা আছে।আবার পুলিশি হয়রানী, কোর্ট কাচারির ভয় ও আছে।কিন্তু পরচর্চার আসরে যতোখুশি আঘাত কর,যতো খুশি ঘায়েল কর,কোন ঝঞ্ঝাট নাই।যার বিরুদ্ধে চর্চা করলাম তারও কোন প্রতিক্রিয়া নাই।এতে কারও ক্ষতি হলো না বরং লাভ হলো।
–
দাদ চুলকানীর সুখের মতো মানসিক এলার্জি চুলকানোর সুখ।সুতরাং পরচর্চায় আর কী বা মন্দ!কেবল একধরণের বিনোদন মাত্র।
–
পরচর্চা যার বিষয়ে শুরু হয়,সেই লোকটির কোন না কোন দোষ-ত্রুটি,কেলেঙ্কারি, কু-কর্মের গল্পে সবাই ডাক্তার,বৈদ্য, ওঝা হয়ে যায়।সবাই সমস্বরে চর্চিত ব্যক্তির গান গাইবে।একসাথে জ্ঞাতিকাষ্ঠ জ্বালিয়ে শ্মশানে জ্বলন্ত চিতায় আগুন দিতে উৎসুক থাকে।এতে আমাদের ঐক্যহীন দেশে ঐক্য বাড়ে।
–
বলা হয়,পেন ইজ মাইটার দেন সোর্ড।অর্থাৎ অসির চেয়ে মসি বড়।ঠিক তেমনি নিন্দাও কম শক্তিশালী নয়।
সহজভাবে, নিন্দুক ইজ মোর পাওয়ারফুল দেন বন্দুক।
প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে,ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।তবুও সিগারেট বাজারে ভালো চলে।তেমনি অামরা সকলে জানি পরচর্চা নৈতিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর,মানবতার অবক্ষয়। তবুও পরচর্চা এখন বিনোদন মাত্র।কারণ চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনী।
আসুন,পরচর্চাকারী ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলি।নিজ যোগ্যতাই প্রমাণ করি,আমিও পারি।
আর পরচর্চাকারী ব্যক্তির সমালোচনা না করে আত্ম সমালোচনা করি।এতে ভুল শুধরে এগিয়ে চলার প্রত্যয় বাড়বে,জোগাবে কাজ করার স্পৃহা।
আসুন,সমালোচনায় বিচলিত না হয়ে আলোচিত হয়।
ভালো থাকুন সকলে।
কক্সবাজার থেকে—
মার্জিয়া।
তারিখ:২৩/০৯/২০২০ইং।