কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, তাদের পুনরায় ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ মার্চ ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারি হিসেবে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা বসতি ভষ্মীভূত হয়েছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অর্ধ লাখ রোহিঙ্গা। এ ছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১১ জনের প্রাণহানি, দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ক্যাম্পের ভেতরে বসবাসরত দুই শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি ও দেড় হাজার দোকানপাট পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে রোহিঙ্গাদের অনেকেই এর মধ্যে এনজিওদের সহযোগিতায় পুনরায় বসতি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে। অন্যরাও ঘর নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে পুড়ে যাওয়া স্থানীয়দের ঘর পুনরায় নির্মাণ করতে গেলে রোহিঙ্গারা তাদের জায়গা দাবি করে দলবল নিয়ে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি (সিআইসি) ক্যাম্প ৯ এর ইনচার্জ মো. তানজীমকে জানানো হলে তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
পশ্চিম বালুখালীর বাসিন্দা বশির আহমদ অভিযোগ করে বলেন, গত ২২ মার্চ অগ্নিকাণ্ডের সময় আমি কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছিলাম। সেগুলো রোহিঙ্গারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এখন রোহিঙ্গারা আমাকে ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না, আমাকে তারা দল বেধে মারধর করেছে। আমার ভিটা নাকি রোহিঙ্গাদের জায়গা। তিনি বলেন, বিষয়টি ক্যাম্প ইনচার্জকে জানালে তিনি দলিল দেখাতে বলেছেন। যখন বলেছি স্যার এটা বনবিভাগের জায়গা, আমরা ৫০ বছর ধরে বসবাস করছি। তখন তিনি আমাদের কাঁটাতারের বাইরে চলে যেতে বলেছেন। আমি এখন আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো?
বালুখালীর নুরুজ্জামান নামের আরেকজন বলেন, আমার ভিটায় রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য জায়গা দিয়েছি। তাদের কারণে দুই বছরে দুইবার আমার ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এখন আমার ভিটা রোহিঙ্গারা তাদের দাবি করে আমাকে ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। ক্যাম্প-৯ এর ইনচার্জও রোহিঙ্গাদের পক্ষে বলতেছে। আমাদের স্থানীয়দের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আগুনের তাণ্ডবের সর্বশান্ত হয়ে পড়া স্থানীয়দের অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় তাদের জায়গায় মাথাগোঁজার জন্য পলিথিন দিয়ে কোনো রকম ঘর নির্মাণ করতে গেলে তাদের বাধা দিচ্ছে সেখানে আশ্রিত উশৃংখল রোহিঙ্গারা। ভুক্তভোগী স্থানীয়রা এ বিষয়ে ক্যাম্প-৯ এর ইনচার্জ এর কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তিনি তাদের জায়গা জমির দলিল নিয়ে যেতে বলেছেন। দলিল না থাকলে ওই এলাকা ছেড়ে ক্যাম্প ও কাঁটাতারের বাইরে কোথাও চলে যেতে বলেছেন।
বিষয়টা অমানবিক ও দুঃখজনক উল্লেখ করে গফুর উদ্দীন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে বনবিভাগের জায়গায় এসব স্থানীয়রা সেখানে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে দখলে থাকা অনেক জায়গা স্থানীয়রা ছেড়ে দিয়েছে। আগুনে সর্বশান্ত এসব স্থানীয়রা এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এর ইনচার্জ ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. তানজীব বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কাঁটাতারের ভেতর হোস্ট কমিউনিটির অনেক লোকজন রয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ্ রেজওয়ান বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, গত পরশুদিন ঘর পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা ঘর নির্মাণ করছিল- এসময় স্থানীয় কিছু মানুষ এসে বলছে আগে এখানে রোহিঙ্গাদের ঘর ছিল, এখন আর রোহিঙ্গাদের ঘর করতে দেওয়া হবে না। এসব বলায় তাদের (স্থানীয়দের) ওখান থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।