কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার ‘দালালির’ অভিযোগে ১৩ ব্যক্তিকে তলব করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে একজন আইনজীবীও রয়েছেন।
এরা হলেন- এহসানুল করিম, মহিবুল্লাহ, মো. তাজউদ্দিন, মো. মামুন, জালাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বাহাদুর, এডভোকেট নোমান শরীফ, মনজুর আলম, মো. নুরুল আবছার, সৈয়দ আকবর ও আবদুল মান্নান খান। দুইজনের সঠিক নাম পাওয়া যায় নি।
তাদেরকে আগামি ১১ অক্টোবর সকাল ১০টায় দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।
গত ৫ অক্টোবর দুর্ণীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি উপ-পরিচালক শরীফ উদ্দিন এই নোটিশ জারি করেছেন।
নোটিশ দেয়া এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা কক্সবাজার এলএ শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাথে যোগসাজস করে কক্সবাজার জেলার অধিগ্রহণকৃত বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ ও দুর্ণীতির মাধ্যমে আদায় করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারেরও (মানিলন্ডারিং) অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, অভিযোগের ব্যাপারে আগামি ১১ অক্টোবর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে ওই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য নেই বলে ধরে নেয়া হবে।
দুর্ণীতি দমন কমিশন ইতোপূর্বেও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্ণীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজন সার্ভেয়ারকে গ্রেপ্তার করে। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেল, মেয়র মুজিবুর রহমানের শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এছাড়াও কক্সবাজারের ২ সাংবাদিককেও নোটিশ দেয় দুদক।
সুত্র মতে, গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার এলএ শাখার দুই সার্ভেয়ার ওয়াসিম ও ফরিদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৯৬ হাজার ৩৭৪ টাকা জব্দ করে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের ঢাকাস্থ ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল হল শাখা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়। এদের মধ্যে সার্ভেয়ার ওয়াসিমের ২৫ হাজার ৫৪৬ টাকা ও সার্ভেয়ার ফরিদের ৭০ হাজার ৮২৮ টাকা জব্দ করা হয়।
এছাড়াও এবার নোটিশ দেয়া এডভোকেট নোমান শরীফের ভাই ও মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফের ব্যাংক একাউন্টও জব্দ করা হয়েছে।
ইতোপূর্বে ঝিলংজার উত্তর মুহুরী পাড়ার মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির ৪ কোটি জব্দ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর বড় ভাই (শ্যালক)।
তারও আগে মেয়র মুজিবুর রহমান, তাঁর বড় ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও পৌরসভার কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫০৫ টাকা, সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলের একদফায় ১ কোটি ৬৭ লাখ ১১ হাজার টাকা মূল্যের ১.০১১১ একর জমি, আরেকদফায় ২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও কক্সবাজার শহরে ৪টি ফ্ল্যাটও জব্দ করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মিজানুর রহমান ঝিলংজা ইউনিয়নের উত্তর মুহুরী পাড়ার মৃত আবদুল গণির ছেলে।
দূর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমানের নামে এফডিআর করা ওই টাকা জব্দ করা হয়েছে।
দুদকের ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত চলাকালে সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলসহ কক্সবাজার জেলার ১০ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান করছে দূদক। এই ১০ জনের মধ্যে কক্সবাজারে কর্মরত দুইজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এই অনুসন্ধানকালে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ঘটনায় পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তাঁর বড় ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও পৌর কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর নামও উঠে আসে। অধিকতর তদন্তে উঠে আসে মেয়র মুজিবুর রহমানের দুই শ্যালকের নামও।
সুত্র মতে, দুদকের অনুসন্ধানে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মো. কায়সার নোবেলের নামে চলমান বেসিক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ইতোপূর্বে ২০ কোটির বেশি টাকার সন্ধান পায় দূদক। ওই টাকা জব্দের পর কক্সবাজার জেলা ডাকঘরে আরও ৮০ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ ইউনিয়ন ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় আরও ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়।
সুত্র জানিয়েছেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন ব্যাংকে সঞ্চিত ওই ৪২ লাখ টাকা জব্দ করতে অভিযান চালায় দূদক।
ওই সুত্র জানায়, মেয়র মুজিবুর রহমান, তাঁর ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে গত সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার শহরের থানা রাস্তার মাথায় স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই ব্যাংকে তিনজনের হিসাবে ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫০৫ টাকা পাওয়া যায়।
দুদক জানায়, মেয়র মুজিবুর রহমানের শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তল্লাশিকালে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ৪ কোটি টাকার সন্ধান পায় দুর্নীতি দমন কমিশন। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমানের এফডিআর একাউন্টে গচ্ছিত ৪ কোটি জব্দ করে দুদক।
অভিযোগ মতে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কথিত মধ্যস্থতার (দালালি) নামে অবৈধ উপায়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে দুদক। তাই পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, ছেলে হাসান মেহেদী রহমান, মেয়রের শ্যালক মিজানুর রহমান, কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়াও একই অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলর নোবেলের নামে চলমান ব্যাংক হিসাবে পাওয়া ২০ কোটি, ডাকঘরে পাওয়া ৮০ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৪২ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার শহরের অভিজাত বেষ্ট ওয়েস্টিন হোটেলে দুইটি ফ্ল্যাট, ওয়ার্ল্ড বীচ হোটেলে একটি ও আরেকটি আবাসিক বিল্ডিংয়ে একটি ফ্ল্যাট জব্দ দেখানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুই সাংবাদিকসহ জেলার ১০ জনের হিসাব অনুসন্ধান করছে দুদক। এর পর অনেকের নাম উঠে আসছে।